করো'নাভাই'রাস বা কোভিড-১৯ মহামা'রি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে গোটা বিশ্ব। ভাই'রাসটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ লাখ মানুষ আ'ক্রান্ত হয়েছেন। মা'রা গেছেন মা'রা গেছেন ৪ লাখ ৫১ হাজারের বেশি মানুষ।
কিন্তু গবেষকদের তথ্য বলছে, করো'নাভাই'রাসের চেয়ে ভ'য়ংকর একাধিক মা'রণ ভাই'রাস রয়েছে পৃথিবীতে। যা খুব সহযেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এর আগে ১৯১৮ থেকে ১৯১৯ সালে এমন একটি মহামা'রি দেখা দিয়েছিল। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাই'রাসের আক্রমণে তখন বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫ কোটি মানুষ মা'রা গিয়েছিল। শক্তিশালী এসব ভাই'রাস বর্তমান সময়ে ছড়িয়ে পড়লে মাত্র ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সারা বিশ্বে পৌঁছে যাবে এবং প্রায় ৮ কোটি মানুষের মৃ'ত্যু হতে পারে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক এক প্রধান এ আশ'ঙ্কা করেছিলেন বেশ কয়েক মাস আগে। তার সতর্ক বার্তা নিয়ে দ্য গ্লোবাল প্রিপেয়ার্ডনেস মনিটরিং বোর্ড (জিপিএমবি) এর ‘এ্যা ওয়ার্ল্ড এট রিক্স’ শিরোনামে প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্টে এ সতর্ক বার্তা দেয়া হয়েছিল।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জিপিএমবি তাদের এ গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। তখন যু'ক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়েছিল, জিপিএমপির গবেষকরা বলছেন, আ'লোচিত ইবোলা, জিকা বা ডেঙ্গুর মতো করেই এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ছড়িয়ে পড়ার আশ'ঙ্কা রয়েছে।
এজন্য বিশ্বনেতাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে এমন মহামা'রি প্রতিরোধে সব প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল ওই গবেষণা রিপোর্টে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক প্রধান ও নরওয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আল হাদ আজ সি এর নেতৃত্বে এ গবেষণা পরিচালিত হয়। তিনি বর্তমানে জিপিএমবি এর সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে ২০১৬ সালে রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলে ১২ বছর বয়সী এক শি'শুর মৃ'ত্যু হয় অজানা রোগে। ওই এলাকার আরও প্রায় ১১৫ জন অল্প সময়ের ব্যবধানে হাসপাতা'লে ভর্তি হন। পরে জানা যায়, তারা সবাই একটি মা'রাত্মক ব্যাকটেরিয়ায় আ'ক্রান্ত। যার নাম ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস বা অ্যান্থ্রাক্স।
বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে বের করেন, ১৯৪১ সালে একটি বলগা হরিণ মা'রা গিয়েছিল। ৭৫ বছর আগে মা'রা যাওয়া ওই হরিণটি থেকে রোগটি ছড়িয়েছে। আবহাওয়া অধিক উষ্ণ হওয়ায় সেখানকার বরফায়িত মাটি বা পারমাফ্রস্ট গলে বেরিয়ে এসেছিল সেই অ্যান্থ্রাক্স।
২০১৫ সালে চীন এবং যু'ক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা তিব্বতে গলিত তুষারের স্রোত থেকে ২৮টি নতুন ধরনের ভাই'রাস খুঁজে পান। বায়োরিভ নামে একটি ওয়েবসাইটে ওই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
সেখানে বলা হয়, গবেষকরা ১৬৪ ফুট গর্ত খুঁড়ে ১৫শ’ বছরের পুরনো গ্লাসিয়ার থেকে দুটি নমুনা সংগ্রহ করেন। পরে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে তারা মোট ৩৩ ধরনের ভাই'রাসের সন্ধান পান। যার মধ্যে ২৮টি ভাই'রাসই আগে কখনো কেউ খুঁজে পাননি।
পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়ত গলছে তিব্বত থেকে শুরু করে মেরু অঞ্চলসহ উত্তর গো'লার্ধের তুন্দ্রা, সাইবেরিয়া আলাস্কা এবং গ্রিনল্যান্ড অঞ্চলের বরফ। ভ'য়ের কথা হলো, গবেষণায় বেরিয়ে আসছে, এসব বরফের স্তরে স্তরে এখনো টিকে আছে আদিম সব ভাই'রাস, ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন মা'রাত্মক রোগ জীবাণু। যার বেশিরভাগই আধুনিক যুগের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে পারে। মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাও ওইসব ভাই'রাস ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে পরিচিত নয়।
ভাই'রাস ব্যাকটেরিয়া নিয়ে বিজ্ঞানীদের পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং গবেষণা চলছে। এখন নিশ্চিতভাবেই তা আরো বেড়েছে। এরই মধ্যে তারা অনেক ভ'য়ঙ্কর ভাই'রাসের অস্তিত্বের খোঁজ পেয়েছেন। সেগুলো সুবিধাজনক পরিবেশ পেলে অর্থাৎ উষ্ণতা আরেকটু বাড়লে প্রকৃতিতে ছড়াতে শুরু করবে। এসব ভাই'রাস মহামা'রী ছড়াতে সক্ষম।
ফ্রান্সের এআইএক্স মা'র্সেই ইউনিভা'র্সিটির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. জন মাইকেল ক্ল্যাভেরিয়ে গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, আম'রা প্রথমবারের চেষ্টাতেই ত্রিশ হাজার বছরের পুরনো সুপারভাই'রাসকে জাগিয়ে তুলতে পেরেছি। সেটা তাৎক্ষণিকভাবে অ্যামিবাকে সংক্রমিত করতে পেরেছে। কিন্তু পারমাফ্রস্টের মধ্যে আরো কি কি ধরনের জীবাণু লুকিয়ে আছে তা আসলে আম'রা জানি না। এটা অনুমান করাও সম্ভব না।
২০০৯ সালে যু'ক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি অব ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) মহামা'রি নিয়ে একটি গবেষণা প্রোগ্রাম শুরু করে ‘প্রেডিক্ট’ নামে। এটির কাজ ছিল জুনটিক (যেসব ভাই'রাস প্রা'ণী থেকে মানুষে ছড়াতে পারে) ভাই'রাস শনাক্ত করা যেগুলো মানব সমাজে মহামা'রি ঘটাতে সক্ষম এবং বিশ্বকে এই ধরনের ভাই'রাস মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলা।
এর গবেষকরা দেখেছেন, ২১ শতকের শুরুর দিকে যতগুলো নতুন ভাই'রাস কিংবা নতুন করে প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়া ভাই'রাস তার ৭৫ শতাংশই অন্য প্রা'ণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে।
‘প্রেডিক্ট’ ১ হাজার ১০০টি ভিন্ন ধরনের ভাই'রাস আবিষ্কার করে। ৬০টি রোগ শনাক্তকরণ ল্যাবরেটরি তৈরি করে এবং ৩০টি দেশের ৬ হাজার ২০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্যমতে, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামা প্রশাসন এ গবেষণা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়েছিল।
Comments
Post a Comment